Artifical Intelligence

সহজ ভাষায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence – AI) নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। AI-এর সাহায্যে মাত্র কয়েকটি প্রম্পট লিখেই কয়েক ঘণ্টার কাজ কয়েক মিনিটে সম্পন্ন করা সম্ভব, যা দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বাড়াচ্ছে। তাই, যারা আইটি ক্ষেত্রে কাজ করি, আমাদের অবশ্যই AI সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা রাখা দরকার।

যদি আমরা সময়ের সাথে AI-কে গ্রহণ (Adopt) করতে না পারি, তাহলে প্রযুক্তির দৌড়ে পিছিয়ে পড়ব। পঞ্চম শিল্প বিপ্লবের (Industry 5.0) একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, যা ভবিষ্যতের প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করবে।

আজকের পোস্টে আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (Artificial Intelligence – AI) মৌলিক ধারণা, এর বিভিন্ন প্রকারভেদ এবং AI কীভাবে কাজ করে—এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।

চলুন শুরু করা যাক।

What is aI?

Artificial Intelligence (AI) হলো একটি কম্পিউটার সিস্টেমের এমন সক্ষমতা, যা সাধারণত মানুষের বুদ্ধিমত্তা প্রয়োজন এমন কাজ সম্পাদন করতে পারে। AI মানুষের মতো নতুন জিনিস শিখতে পারে, সমস্যা সমাধান করতে পারে, সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং এমনকি এমন অনেক কাজও করতে সক্ষম, যা আগে মানুষের উপস্থিতি প্রয়োজন ছিল। উদাহরণস্বরূপ, স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলতে সক্ষম সেলফ-ড্রাইভিং কার।

History of AI

বর্তমানে AI আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হলেও এর ইতিহাস বেশ পুরনো। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশ দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন ধাপে পরিলক্ষিত হয়েছে।

ধাপ-১ঃ AI এর জন্ম

১৯৫০ সালে বিজ্ঞানী অ্যালান টুরিং তার গবেষণাপত্র “Computing Machinery and Intelligence” -এ প্রথমবারের মতো প্রশ্ন তোলেন—”মেশিন কি চিন্তা করতে পারে?” এরপর তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণার ভিত্তি হিসেবে টুরিং টেস্ট ধারণা প্রস্তাব করেন।

১৯৫৬ সালে জন ম্যাকার্থি, মার্ভিন মিনস্কি, নাথানিয়েল রোচেস্টার, এবং ক্লড শ্যানন যুক্তরাষ্ট্রের ডার্টমাউথ কলেজে একটি সম্মেলন আয়োজন করেন, যেখানে প্রথমবারের মতো “Artificial Intelligence” শব্দটি ব্যবহৃত হয়। এটি আধুনিক AI গবেষণার সূচনা করে।

ধাপ-২ঃ AI-র প্রাথমিক উন্নয়ন

১৯৬০ থেকে ১৯৭০-এর দশকে গবেষকরা লজিকঅ্যালগরিদমের ভিত্তিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উন্নয়ন শুরু করেন।

১৯৬৬ সালে ELIZA নামক প্রথম চ্যাটবট তৈরি হয়, যা মানুষের সাথে মৌলিক কথোপকথন করতে সক্ষম ছিল। একই সময়ে এক্সপার্ট সিস্টেম নামে পরিচিত বুদ্ধিমান সফটওয়্যার বিকশিত হয়, যা নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে মানুষের মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারত।

ধাপ-৩ঃ নিউরাল নেটওয়ার্ক ও মেশিন লার্নিং

১৯৮০ সালে ব্যাকপ্রোপাগেশন (Backpropagation) নামক একটি পদ্ধতি চালু হয়, যা নিউরাল নেটওয়ার্ককে আরও ভালোভাবে শিখতে সাহায্য করে। এই সময় বিভিন্ন কোম্পানি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান AI-তে বিনিয়োগ শুরু করে। ১৯৯৭ সালে IBM-এর Deep Blue সুপারকম্পিউটার দাবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন গ্যারি কাসপারভকে পরাজিত করে, যা AI-র ইতিহাসে একটি বড় অর্জন।

ধাপ-৪ঃ বিগ ডাটা ও ডিপ লার্নিং

ইন্টারনেট ও বিগ ডাটার বিকাশের ফলে AI-তে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়। ২০১১ সালে IBM Watson কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন সিস্টেম Jeopardy! কুইজ শোতে মানুষের বিরুদ্ধে জয়ী হয়। ২০১৬ সালে Google DeepMind-এর AlphaGo বিশ্বের অন্যতম সেরা গো (Go) খেলোয়াড়কে পরাজিত করে।

ধাপ-৪ঃ বর্তমান ও ভবিষ্যৎ

বর্তমানে AI স্বচালিত গাড়ি, রোবট, স্বাস্থ্যসেবা, ফিনটেকসহ নানা ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাচ্ছে। OpenAI-এর ChatGPT, Google-এর Bard, এবং অন্যান্য জেনারেটিভ AI প্রযুক্তি মানুষের দৈনন্দিন জীবনে গভীরভাবে প্রবেশ করেছে।ভবিষ্যতে AI আরও উন্নত হয়ে মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনবে।

Types of AI

Artificial Intelligence কে সাধারণভাবে ০৩ ভাগে ভাগ করা যায়।

  1. Weak / Narrow AI
  2. General or Strong AI
  3. Super AI

Weak or Narrow AI

এই ধরনের AI গুলো সাধারণত একটি নির্দিষ্ট কাজ করার জন্য তৈরি করা হয়ে থাকে। Weak / Narrow AI কে কোনো নির্দিষ্ট কাজের জন্য ট্রেইন করা হয়ে থাকে। ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট যেমনঃ Siri, Google Assistant, Alexa, বিভিন্ন রিকোমেন্ডেশন সিস্টেম যেমনঃ Netflix, Amazon, Spotify এর মুভি সাজেস্ট করে ইউজারের প্রিফারেন্সের ভিত্তিতে, সেলফ ড্রাভিং কার যেমনঃ Tesla ইত্যাদি সবই Weak or Narrow AI এর উদাহরণ।

বর্তমানে যত Modern AI আছে সবই Weak AI .

General or Strong AI

Artificial General Intelligence (AGI) এমন একটি AI সিস্টেম, যা মানুষের মতো বুদ্ধিমত্তা এবং চিন্তা-ভাবনা করার ক্ষমতা রাখবে। এটি কোন নির্দিষ্ট কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং এটি যেকোনো সাধারণ কাজ বা সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হবে, যা মানুষের মস্তিষ্ক করতে পারে। AGI-র উদ্দেশ্য হলো মানব মস্তিষ্কের মতো নানান প্রেক্ষাপটে শিখতে, বুঝতে এবং সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হওয়া।

তবে, বর্তমানে বাস্তবে AGI এর কোনো সিস্টেম বিদ্যমান নেই। প্রযুক্তির এই স্তরে পৌঁছানোর জন্য এখনও অনেক গবেষণা এবং উন্নয়ন প্রয়োজন। বর্তমানে যা বিদ্যমান, তা হচ্ছে Weak AI বা Narrow AI, যা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কাজ বা ক্ষেত্রেই কার্যকরী।

Super Artificial Intelligence

Artificial Super Intelligence (ASI) একটি কাল্পনিক প্রযুক্তি, যা AGI (Artificial General Intelligence)-এর পরবর্তী স্তর হিসেবে বিবেচিত। এটি একটি অত্যন্ত উন্নত এবং শক্তিশালী AI সিস্টেম হবে, যা মানুষের বুদ্ধিমত্তার চেয়ে অনেক বেশি সক্ষম। ASI এমন এক ধরনের বুদ্ধিমত্তা, যা মানব মস্তিষ্কের সীমাবদ্ধতাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে এবং যেকোনো জ্ঞান, সমস্যা সমাধান, এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মানুষের চেয়ে অনেক দ্রুত এবং দক্ষভাবে কাজ করবে।

ASI-র ক্ষমতা এমনভাবে হবে যে এটি শুধু মানবিক বুদ্ধিমত্তাকে অতিক্রম করবে না, বরং মানবজাতির জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বারও খুলে দেবে। এটি অত্যন্ত জটিল সমস্যা সমাধানে অতুলনীয় দক্ষতা প্রদর্শন করবে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে (যেমন বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, চিকিৎসা, অর্থনীতি) দ্রুত এবং নির্ভুল সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবে।

তবে, ASI বর্তমানে শুধুমাত্র একটি ধারণা এবং এটি বাস্তবে কবে আসবে, তা এখনো অনিশ্চিত।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.